1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শাহজাহানের ডেরায় 'নিষিদ্ধ অস্ত্র', জঙ্গি যোগের শঙ্কা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সন্দেশখালিতে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র শুধু বিদেশি নয়, নিষিদ্ধ। এমনই দাবি সিবিআই সূত্রের।

https://p.dw.com/p/4fFyK
সন্দেশখালিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী
তৃণমূলের দাপুটে নেতা শাহজাহানের বাড়িতে গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে অভিযান চালিয়েছিল ইডি।ছবি: Subrata Goswami/DW

পাওয়া গিয়েছে পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্রও। আজও সেখানে অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা।

উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। শুক্রবার তারা তদন্তে গিয়ে উদ্ধার করেছে অস্ত্রশস্ত্র।

উদ্ধার অস্ত্র

কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে সিবিআই আধিকারিকরা সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় অভিযান চালান। সেই সময় খবর আসে, গ্রামের এক প্রান্তে একটি একতলা বাড়িতে অস্ত্র মজুত রয়েছে। সিবিআই খবর দেয় এনএসজিকে। তাদের দল এসে রোবট ব্যবহার করে অনেক অস্ত্র, গুলি উদ্ধার করে।

অস্ত্রের ছবি প্রকাশ করে সিবিআই দাবি করেছে, তিনটি বিদেশি ও একটি দেশি রিভলভার উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের কোল্ট রিভলভার মিলেছে।  একটি দেশি ও একটি বিদেশি পিস্তল পেয়েছে এনএসজি।

সিবিআইয়ের দাবি, উদ্ধার হয়েছে পাউচে রাখা কয়েকশো গুলি ও ছররা। কয়েকটি হাতবোমাও মিলেছে শাহজাহানের আত্মীয় আবু তালেবের বাড়ি থেকে। মাটি ও মেঝে খুঁড়ে অস্ত্র, গুলি উদ্ধারের পাশাপাশি শাহজাহান শেখের আধার ও ভোটার কার্ড হাতে এসেছে কেন্দ্রীয় সংস্থার।

সেই জায়গা থেকে মিলেছে জেলবন্দি নেতার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স। অস্ত্র ও কার্তুজ কেনার রসিদ পাওয়া গিয়েছে তল্লাশিতে। সিবিআইয়ের দাবি, কলকাতার একটি দোকানের রসিদ রয়েছে যেখান থেকে কার্তুজ কেনা হয়েছে।

শেখ শাহজাহান
আদালতের নির্দেশে সন্দেশখালির ঘটনায় তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। শাহজাহানকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ছবি: Subrata Goswami/DW

তৃণমূলের দাপুটে নেতা শাহজাহানের বাড়িতে গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। সেই সময় আধিকারিকরা শাহজাহানের অনুগামীদের হাতে আক্রান্ত হন। অভিযুক্ত নেতা কয়েক সপ্তাহ গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাকে তুলে দিতে হয় সিবিআইয়ের হাতে।

আদালতের নির্দেশে সন্দেশখালির ঘটনায় তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। শাহজাহানকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে গতকাল সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন রাজ্য সরকার।

অস্ত্র উদ্ধারে প্রশ্ন

আজ, শনিবারও সিবিআইয়ের তিনটি দল সরবেড়িয়ায় অভিযান করে। তারা আবু তালেবের বাড়ি ঘিরে ফেলে। বাড়িটি তালাবন্ধ ছিল, কেউ ছিলেন না। পেশায় দিনমজুর ও টোটোচালক আবুর বাড়িতে বহুমূল্য আগ্নেয়াস্ত্র কীভাবে এল, এই বিষয়টি স্তম্ভিত করেছে এলাকার মানুষকে।

সুন্দরবন লাগোয়া সন্দেশখালি ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। তিন দিকে নদী দিয়ে ঘেরা এই দ্বীপ অঞ্চলের সীমান্ত বরাবরই চোরাচালানকারীদের পক্ষে অপেক্ষাকৃত সহজ যোগাযোগের পথ।

শাহজাহানের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গতকাল উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে বিদেশি অস্ত্র থাকায় চোরাচালানোর তত্ত্ব সামনে আসছে। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে তিনটি আমেরিকান রিভলভার রয়েছে। এর প্রতিটির দাম আট থেকে ১০ লক্ষ টাকা।

প্রশ্ন উঠেছে, এই রিভলভার ও অন্যান্য অস্ত্র কেন এই বাড়িতে মজুত রাখা হয়েছিল? অনেকে দাবি করছেন, শাহজাহানের বাড়িতেই এসব অস্ত্র ছিল। ইডি অভিযানের পর সেগুলি পাঠিয়ে দেয়া হয় ৫০০ মিটার দূরে, আত্মীয় আবু তালেবের একতলা বাড়িতে।

নিষিদ্ধ অস্ত্র?

সাম্প্রতিক অতীতে বারবার জেলায় জেলায় বেআইনি অস্ত্র, বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। বিস্ফোরণের জেরে প্রাণ গিয়েছে অনেক মানুষের। কিন্তু সন্দেশখালিতে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র আরো বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।

সিবিআই সূত্রের দাবি, গতকাল উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের একটা বড় অংশ নিষিদ্ধ প্রকৃতির। অর্থাৎ লাইসেন্স থাকলেও খোলা বাজার থেকে কেউ এই অস্ত্র কিনতে পারেন না। অনুমান করা হচ্ছে, ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে এইসব অস্ত্র অর্ডার দিয়ে আনানো হয়েছিল।

বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছে, নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, বোমা, গুলি মজুত করেছে শাসক শিবির। পাল্টা একই ধরনের অভিযোগ করেছে তৃণমূলও। এসব অস্ত্র বা বোমা অধিকাংশই দেশি বা স্থানীয় ভাবে তৈরি করা হয়।

কিন্তু শাহজাহানের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মেলা অস্ত্র বিদেশি ও নিষিদ্ধ। সেগুলি কেন আনা হয়েছিল? সিবিআই সূত্রের দাবি, এই অস্ত্র কেনার সময় ভুয়া নথি ব্যবহার করা হয়। সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ থেকে সম্প্রতি কলকাতায় দুই জঙ্গির গ্রেপ্তারি থেকে বোঝা গিয়েছে, এ রাজ্যের উপর সন্ত্রাসবাদীদের নজর রয়েছে। তাই সন্দেশখালির অস্ত্র উদ্ধারকে এর সঙ্গে জুড়ে দেখছেন অনেকে।

সাবেক এনএসজি আধিকারিক দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, "ইসলামিক স্টেট, আল-কায়দা ভারত মায়ানমার ও বাংলাদেশের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের রাজ্যের সাতটি জেলাকে ওরা বেছে নিয়েছে। তাই সন্দেশখালিকে কেবল একটা নেতার প্রতিপত্তি, সম্পত্তি বানানো, এভাবে দেখা ঠিক নয়। এটা তার থেকে অনেক বড় বিপদ, তা বুঝিয়ে দিল অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা।"

'ইসলামিক স্টেট ভারত, বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে চায়'

নির্বাচনের মধ্যে অভিযান

বসিরহাট লোকসভার অধীন সন্দেশখালি। লোকসভা নির্বাচন চলার সময় মজুত অস্ত্র সামনে আসায় বিরোধীরা সরব হয়েছে।

বিজেপির সিনিয়র নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, "সীমান্তবর্তী এলাকায় তৃণমূল নেতাদের মদতে বিদেশ থেকে অস্ত্র আসছে। রোহিঙ্গাদের ওখানে এনে খাইয়ে-পরিয়ে রাখছে তৃণমূল। পুরোটাই দেশবিরোধী কাজ। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।"

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকালের ঘটনাকে কার্যত ষড়যন্ত্রের তকমা দিয়েছেন। তিনি আজ নির্বাচনী জনসভায় বলেন, "সব একতরফা, রাজ্য পুলিশকে কিছু জানানো হয় না। কোথা থেকে, কী পাওয়া গিয়েছে, হতে পারে নিজেরাই গাড়িতে ভরে এনেছিলেন। কোনও প্রমাণ নেই যে, ওখান থেকেই উদ্ধার হয়েছে।"

কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস চিঠি লিখেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নির্বাচন চলাকালীন এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ হোক।

আইন অনুযায়ী, এ ধরনের অভিযানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংস্থা রাজ্য পুলিশকে জানিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে বাধ্য নয়। এছাড়া বিরোধীরা বারবার বলেছে, রাজ্য পুলিশকে আগাম জানালে তারা প্রমাণ লোপাট করে দিতে পারে, এই আশঙ্কাও রয়েছে।